মানুষ ঘুমের মধ্যে কথা বলে কেন?
মানুষ ঘুমের মধ্যে কথা বলে কেন?
অনেক মানুষ ঘুমের মধ্যে কথা বলে, যা বিজ্ঞানের ভাষায় "স্লিপ টকিং" (Sleep Talking) নামে পরিচিত। এটি সাধারণত ক্ষণস্থায়ী এবং বিপজ্জনক নয়, তবে অনেক সময় এটি গভীর শারীরবৃত্তীয় বা মানসিক সমস্যার ইঙ্গিত বহন করতে পারে। ঘুমের মধ্যে কথা বলা একটি সাধারণ ঘটনা হলেও এর সঠিক কারণ সম্পর্কে অনেকেরই পরিষ্কার ধারণা নেই।
ঘুমের মধ্যে কথা বলার কারণসমূহ:
- গভীর মানসিক চাপ ও উদ্বেগ: অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্লিপ টকিংয়ের প্রধান কারণ মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা বা উদ্বেগ। যারা দিনের বেলায় মানসিকভাবে অতিরিক্ত চাপে থাকেন, তারা রাতে ঘুমের মধ্যে কথা বলতে পারেন।
- ঘুমের ব্যাঘাত: অনিয়মিত ঘুমের অভ্যাস, পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া বা ঘন ঘন ঘুম ভাঙলে স্লিপ টকিং হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
- জিনগত কারণ: গবেষণায় দেখা গেছে, যদি পরিবারের কারও স্লিপ টকিংয়ের সমস্যা থাকে, তবে অন্য সদস্যদের মধ্যেও এটি দেখা যেতে পারে।
- স্বপ্নের প্রতিক্রিয়া: অনেক সময় স্বপ্ন দেখার সময় মানুষ অজান্তেই কথাগুলো উচ্চারণ করতে পারে। বিশেষ করে ভয়াবহ বা তীব্র আবেগপূর্ণ স্বপ্ন দেখার সময় এই ঘটনা বেশি ঘটে।
- ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কিছু ওষুধ, বিশেষ করে মানসিক রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, ঘুমের মধ্যে কথা বলার প্রবণতা বাড়িয়ে দিতে পারে।
- ঘুমজনিত ব্যাধি: স্লিপ অ্যাপনিয়া, নাক ডাকা, নাইট টেরর (ভয়াবহ স্বপ্নজনিত ঘুমের ব্যাঘাত) বা অন্যান্য ঘুমজনিত সমস্যার সঙ্গে ঘুমের মধ্যে কথা বলার সম্পর্ক থাকতে পারে।
- অতিরিক্ত ক্লান্তি ও শারীরিক পরিশ্রম: যারা অতিরিক্ত পরিশ্রম করেন বা দিনের বেশিরভাগ সময় শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকেন, তাদের মধ্যে স্লিপ টকিং হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
ঘুমের মধ্যে কথা বলার ধরণ:
- কেউ কেউ স্পষ্টভাবে কথা বলেন, আবার কেউ অস্পষ্ট স্বরে কিছু উচ্চারণ করেন।
- অনেক সময় কথাগুলো স্বপ্নের সাথে সম্পর্কিত হয়, আবার কোনো প্রসঙ্গ ছাড়াই এলোমেলোভাবে বলা হতে পারে।
- সাধারণত এটি কয়েক সেকেন্ড থেকে কয়েক মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
স্লিপ টকিং কি কোনো রোগ?
স্লিপ টকিং সাধারণত কোনো গুরুতর সমস্যা নয়। এটি ক্ষণস্থায়ী এবং বেশিরভাগ সময় চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। তবে যদি এটি খুব ঘন ঘন হয়, অতিরিক্ত উচ্চস্বরে হয়, বা অন্য কোনো ঘুমজনিত সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কিত হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার।
এটি প্রতিরোধ বা নিয়ন্ত্রণের উপায়:
Also read:
- পর্যাপ্ত এবং নিয়মিত ঘুম নিশ্চিত করা।
- ঘুমানোর আগে মানসিক চাপ কমানোর জন্য মেডিটেশন বা শিথিল হওয়ার ব্যায়াম করা।
- ক্যাফেইন এবং এলকোহল গ্রহণ কমানো।
- সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা এবং রাতে অতিরিক্ত ভারী খাবার পরিহার করা।
- নিয়মিত ব্যায়াম করা, তবে ঘুমানোর ঠিক আগে নয়।
- যদি সমস্যা গুরুতর হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
ঘুমের মধ্যে কথা বলা খুব সাধারণ একটি ঘটনা, যা সাধারণত ক্ষতিকর নয়। তবে যদি এটি ঘন ঘন হয় এবং দৈনন্দিন জীবনে সমস্যা তৈরি করে, তাহলে পেশাদার সাহায্য নেওয়া উচিত। সুস্থ জীবনযাপনের মাধ্যমে এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
0 Response to "মানুষ ঘুমের মধ্যে কথা বলে কেন?"
Post a Comment
Hi Dear Visitor! ✨
We’d love to hear your thoughts!
Feel free to leave a comment below. 💬