রচনা: জন্ম হোক যথা তথা, কর্ম হোক ভাল
রচনা: জন্ম হোক যথা তথা, কর্ম হোক ভাল
ভূমিকা: “জন্ম হোক যথা তথা, কর্ম হোক ভাল”—এটি একটি প্রবাদ যা আমাদের জীবনের গূঢ় সত্য প্রকাশ করে। মানুষের জন্ম কোথায়, কিভাবে, কোন পরিবেশে হয়েছে তা গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং সে মানুষ কীভাবে নিজের কর্ম দিয়ে সমাজে অবদান রাখে সেটাই আসল বিষয়। এই প্রবাদটি আমাদের জীবন গঠনে কর্মের গুরুত্ব ও মূল্যবোধ শেখায়।
জন্ম ও সামাজিক অবস্থান: মানুষের জন্ম তার নিয়ন্ত্রণে নেই। কেউ ধনী পরিবারে জন্মায়, কেউ গরিব পরিবারে, কেউ উচ্চবর্ণে, কেউ নিম্নবর্ণে। জন্মের স্থানে বা অবস্থানে কোনো গৌরব নেই। সমাজে অনেকেই জন্মসূত্রে সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকেন, কিন্তু প্রকৃত সম্মান অর্জিত হয় কর্মের মাধ্যমে। তাই জন্ম নয়, মানুষকে বিচার করতে হয় তার কাজ দিয়ে।
কর্মই মানুষের পরিচয়: জন্ম দিয়ে নয়, বরং কর্ম দিয়েই মানুষ তার জীবনের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করে। একজন গরিব ঘরের সন্তানও যদি সততা, মেধা ও পরিশ্রম দিয়ে সমাজে অবদান রাখে, তবে সে সম্মানিত হয়। আবার ধনী ঘরের সন্তান কর্মহীন ও অলস হলে সমাজে অবমূল্যায়িত হয়। আমাদের দেশের ইতিহাসেও বহু মহৎ ব্যক্তি আছেন যারা সাধারণ পরিবারে জন্ম নিয়ে অসাধারণ কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন।
সমাজে প্রভাব: একজন মানুষের সৎ ও মহৎ কর্ম সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনে। যেমন—ড. মুহাম্মদ ইউনুস গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে বিশ্বের দরিদ্র মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন। তাঁর জন্ম সাধারণ পরিবারে হলেও কর্মের মাধ্যমে তিনি নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। তাই সমাজ উন্নয়নে কর্মই সবচেয়ে বড় হাতিয়ার।
চরিত্র গঠনে কর্মের ভূমিকা: কর্ম মানুষের চারিত্রিক গঠনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নিয়মিত, সৎ ও আত্মনিবেদিত কর্ম একজন মানুষকে শৃঙ্খলাবদ্ধ, দায়িত্বশীল ও সমাজবান্ধব করে তোলে। অলসতা ও নিষ্ক্রিয়তা মানুষের মানসিক দুর্বলতা ও অবমূল্যায়নের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই প্রত্যেকের উচিত সদা সচেষ্ট থাকা এবং ভালো কাজের মাধ্যমে নিজের পরিচয় গড়ে তোলা।
শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব: শিক্ষার্থীদের জীবনে এই প্রবাদবাক্যের তাৎপর্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ শিক্ষাজীবনই ভবিষ্যতের ভিত্তি। তারা যদি ছোটবেলা থেকেই সৎ ও মহৎ কর্মে অভ্যস্ত হয়, তবে ভবিষ্যতে তারা দেশ ও জাতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। তাদের জন্ম যেখানেই হোক না কেন, কর্মের মাধ্যমে তারা হতে পারে জাতির আলোকবর্তিকা।
উপসংহার: সবশেষে বলা যায়, জন্ম মানুষের নিয়ন্ত্রণে নয়, কিন্তু কর্ম সম্পূর্ণ মানুষের ইচ্ছা ও চেষ্টার ওপর নির্ভরশীল। তাই জন্ম হোক যথা তথা—মানে যেখানে ইচ্ছা হোক, কিন্তু কর্ম হোক ভাল—মানে কর্ম যেন হয় মহান, সৎ ও কল্যাণকর। একজন মানুষের জীবনের আসল মূল্য নির্ধারিত হয় তার ভালো কর্ম দিয়েই।
0 Response to "রচনা: জন্ম হোক যথা তথা, কর্ম হোক ভাল"
Post a Comment
Hi Dear Visitor! ✨
We’d love to hear your thoughts!
Feel free to leave a comment below. 💬