Menu

Hi dear visitor, Good Evening

রচনা: পরমতসহিষ্ণুতার গুরুত্ব

রচনা: পরমতসহিষ্ণুতার গুরুত্ব

ভূমিকা: পরমতসহিষ্ণুতা বলতে অন্যের মতামত, বিশ্বাস ও চিন্তাধারার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করাকে বোঝায়। একটি বহুমাত্রিক সমাজে বিভিন্ন মানুষের চিন্তাভাবনার পার্থক্য থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যদি আমরা পরমতসহিষ্ণু না হই, তাহলে সমাজে বিভেদ ও সংঘাত সৃষ্টি হতে পারে। ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে শান্তি, সৌহার্দ্য এবং উন্নয়নের জন্য পরমতসহিষ্ণুতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নত করতে এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়তা করে।

পরমতসহিষ্ণুতার গুরুত্ব: পরমতসহিষ্ণুতা সমাজে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার প্রধান মাধ্যম। এটি মানুষের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার বন্ধন গড়ে তোলে। সমাজে নানা ধর্ম, সংস্কৃতি, রাজনৈতিক মতাদর্শ ও জীবনদর্শন রয়েছে, যা নিয়ে মতভেদ হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু যদি আমরা সহিষ্ণুতার অভাব দেখাই, তাহলে সমাজে অশান্তি ও হিংসার সৃষ্টি হতে পারে। তাই ভিন্নমতের প্রতি সম্মান জানিয়ে পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে সহাবস্থান নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পরমতসহিষ্ণুতা: ধর্মীয় পরমতসহিষ্ণুতা সমাজের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি ধর্মই শান্তি, সম্প্রীতি ও সহানুভূতির শিক্ষা দেয়। কিন্তু ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা সমাজে দাঙ্গা ও সংঘাত সৃষ্টি করতে পারে। একইভাবে, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পরমতসহিষ্ণুতা গণতান্ত্রিক চেতনাকে সুসংহত করে। ভিন্ন মতের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া না গেলে গণতন্ত্র বিপন্ন হতে পারে এবং দেশ রাজনৈতিক অস্থিরতার মুখে পড়ে।

শিক্ষা ও পরমতসহিষ্ণুতা: শিক্ষাই মানুষকে সহিষ্ণু করে তোলে। শিক্ষিত ব্যক্তি যুক্তিনির্ভর চিন্তা করতে শেখে এবং অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দিতে পারে। বিদ্যালয়, পরিবার ও সমাজ যদি সহিষ্ণুতা চর্চার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে, তাহলে নতুন প্রজন্ম পরমতসহিষ্ণুতার গুণ অর্জন করতে পারবে। বই, সাহিত্য, ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ক জ্ঞান মানুষকে সহিষ্ণুতার শিক্ষা দেয় এবং তাদের মাঝে সহমর্মিতার গুণাবলি সৃষ্টি করে।

অসহিষ্ণুতার কুফল: পরমতসহিষ্ণুতার অভাব সমাজে বিশৃঙ্খলা ও বিভেদ সৃষ্টি করে। এটি হিংসা, বিদ্বেষ ও দাঙ্গার জন্ম দেয়। অসহিষ্ণুতা মানুষের স্বাধীন চিন্তাকে বাধাগ্রস্ত করে এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ নষ্ট করে। চরমপন্থা, ধর্মীয় হিংসা ও রাজনৈতিক অস্থিরতার মূল কারণই হলো অসহিষ্ণুতা। এ ধরনের পরিবেশ একটি দেশ ও জাতির উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করে এবং অগ্রগতিকে থামিয়ে দেয়।

সহিষ্ণুতা গঠনের উপায়: সহিষ্ণু সমাজ গঠনের জন্য আমাদের ধৈর্যশীল ও সংবেদনশীল হতে হবে। পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে মতভেদ নিরসন করতে হবে এবং অন্যের মতামতকে মূল্যায়ন করতে হবে। পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যমের উচিত সহিষ্ণুতা চর্চার উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা। ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া, শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খোঁজা এবং অহিংস মনোভাব গড়ে তোলার মাধ্যমেই পরমতসহিষ্ণু সমাজ গঠন করা সম্ভব।

উপসংহার: পরমতসহিষ্ণুতা একটি সমাজের অগ্রগতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি। এটি পারস্পরিক বোঝাপড়া বৃদ্ধি করে এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। ধর্ম, রাজনীতি ও ব্যক্তিগত জীবনে সহিষ্ণুতার চর্চা সমাজকে উন্নতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত পরমতসহিষ্ণুতার গুণ অর্জন করা, যাতে আমরা একটি শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ সমাজ গড়ে তুলতে পারি।

0 Response to "রচনা: পরমতসহিষ্ণুতার গুরুত্ব "

Post a Comment

Hi Dear Visitor! ✨
We’d love to hear your thoughts!
Feel free to leave a comment below. 💬

post top ads

Post middle ads

Post middle ads 2

Post down ads